বিগত ১২ জুলাই/২০১৬ ইংরেজী তারিখ মঙ্গলবার বর্ষ-২৬ সংখ্যা- ৩৫, দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় লিড নিউজ হয়েছে “সরকারি হচ্ছে জেলায় ৬টি কলেজ” খবরটি আমার দৃষ্টি গোচর হলে, আমি চিন্তা করলাম যে, টেকনাফ কলেজ উখিয়া কলেজ থেকে ৫ বছর জুনিয়র, বঙ্গমাতা মহিলা কলেজ উখিয়া কলেজ ৬ বছর জুনিয়ার, মহেশখালী বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ উখিয়া কলেজ থেকে ৫ বছর জুনিয়ার, তারা সবাই উখিয়া কলেজ থেকে তথ্য ও ডাটা সংগ্রহ করে কলেজ শুরু করেছিল। তারা আজ জাতীয় করণের তালিকা ভুক্ত কলেজ হিসেবে পরিচিত হয়েছে, অথচ ১৯৯১ সালে প্রতিষ্টিত উখিয়া কলেজের কোন খবর নেই। এইত দেশ ও জাতির পরিস্থিতি! উখিয়া কলেজ থেকে মহেশখালী ডিগ্রী কলেজ থেকে ৫ বছর সিনিয়র, তাদেরও কোন খবর নেই। বঙ্গমাতা, বঙ্গবন্ধু নামধারী যে সমস্ত কলেজ গুলো রয়েছে, সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব এখতিয়ার ভুক্ত রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমাদের নেতা নেত্রীর চিন্তা থাকার কথা নয়। বিশেষ করে অত্র জনপদের উখিয়া কলেজের বিষয়টি এত মেঘাচ্ছন্ন কেন?
কক্সবাজার জেলায় ৬টি সরকারী কলেজের ঘোষনা দিয়েছে। এতে কক্সবাজার জেলাবাসীর সাথে সাথে আমিও খুশি। কক্সবাজার জেলার বাসিন্দারা সমুদ্র সৈকতের মুক্ত হাওয়া খেতে খেতে লেখাপড়ায় পিছনে পড়ে রয়েছে। পড়ালেখায় পিছনে থাকা মানেইতো সবকিছুতেই পিছিয়ে থাকা। যার কারণ হিসেবে বোঝা যাচ্ছে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, বলিষ্ঠ টাকাওয়ালা ও বলিষ্ট ব্যবসায়ী নেই বলেই কক্সবাজার বাসীরা এভাবেই সব কিছুতে পিছিয়ে রয়েছে বহাল তবীয়তে।
দুঃখজনক হলেও সত্য সরকারি ঘোষানার তালিকা প্রাপ্ত ৬টি কলেজের মধ্যে ৩টি কলেজই শুধু মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত। তৎমধ্যে ২টি কলেজ ২৫% (কলেজ দু’টি মহিলা কলেজ- একটি বঙ্গমাতা মহিলা কলেজ, উখিয়া ও অন্যটি মহেশখালী বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ) কারণ ২টি কলেজই একত মহিলা কলেজ, ২য়ত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। কলেজ দু’টিতে সব শাখা সমুহও নেই। সেই দিক দিয়ে কলেজ গুলোকে কোয়াটার কলেজ বলাটা অতুক্তি হবেনা। সে যাই হউক তারপরও কক্সবাজার বাসীর খুশীর সাথে আমিও মহান খুশি।
উখিয়া কলেজটি প্রতিষ্টিত হয়েছে ১৯৯১ সনে অথাৎ ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষ থেকে উখিয়া কলেজের অগ্রযাত্রা শুরু। উখিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে উখিয়া উপজেলার সুযোগ্য ইউ.এন.ও ছিলেন সরকারের বর্তমান জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আব্দুল নাছের চৌধুরী, উনারই মাধ্যমে ১৯৯২ ইংরেজী সনের ১ জানুয়ারী বিলাসী গল্পের পাঠ দানের মাধ্যমে উখিয়া কলেজের পাঠদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। উনারই সহায়তায় ৪টি বিষয়ে অনার্স শ্রেণি চালু করার যথাযত সহযোগিতা পেয়েছি। (বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা) বিষয়ে অনার্স খোলা সম্ভব হয়েছে। অনার্সের বয়স এখন ৩য় বছর সমাপ্তির পথে।
উখিয়া কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে রয়েছে, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান। ডিগ্রী শ্রেণিতে রয়েছে বি.এ, বি.এস.এস, বি.বি.এ, অর্নাসে ৪টি বিষয়ের কথা ইতিপূর্ব উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বি.এম (কারিগরী বোর্ড) শাখাও রয়েছে। অত্র উখিয়া কলেজে বর্তমানে ১,৫৫০ এর অধিক শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছে। বিগত ২৫ বছরে এস.এস.সি ও ডিগ্রি সার্টিফিকেট অর্জনের মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী স্থানীয় ও জাতীয় ভাবে সরকারি ও বেসরকারী চাকুরীতে রত থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। অত্র কলেজে বর্তমান ৩৩ জন শিক্ষক, ৩জন কর্মকর্তা, ৯ জন কর্মচারী এম পি ও ভুক্ত স্থায়ী চাকুরীরত আছেন। ৪ টি অর্নাস বিষয়ে ২০ জন (নন এম পি ও) ভুক্ত শিক্ষক অনার্স পর্যায়ে পাঠদান করে চলেছেন।
কক্সবাজার ও টেকনাফ শহরের মধ্যবর্তী স্থানে নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আরকান সড়ক সংলগ্ন রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বে বিশাল খেলার মাঠের চতুর পার্শ্বে উখিয়া কলেজের অবস্থান। উখিয়া টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু চারটি উপজেলার শিক্ষার্থী অত্র কলেজে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিচ্ছে। ভৌগলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, নির্জনতা ও মনোমুদ্ধকর পরিবেশ ইত্যাদি বিষয় সমূহ বিবেচনা করলে সর্বাগ্রে উখিয়া কলেজকে সরকারী বা জাতীয় করনের আওতাভুক্ত করা উচিৎ ছিল।
সরকারি নীতিমালাতে উল্লেখ রয়েছে, জেলা সমূহ বা উপজেলা সদরের সবচেয়ে জৈষ্ট্য, অবকাঠামোগত উন্নত, খেলার মাঠ সমৃদ্ধ প্রবিনতম কলেজ গুলোকে তালিকা ভুক্ত করার কথা। বঙ্গমাতা, বঙ্গবন্ধু এ সমস্ত নামের কলেজ গুলি বিশেষ করে মহিলা কলেজ গুলি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত এখতিয়ারের মধ্যে আছে। এ গুলোর জন্য নীতিমালার প্রয়োজন ছিলনা বা নেই। নীতিমালা হচ্ছে সাধারণ কলেজ গুলোর ব্যাপারে, সে বিষয়ে টেকনাফ কলেজ, রামু কলেজ, চকরিয়া কলেজ ও কুতুবদিয়া কলেজ সরকারী ঘোষনা করার যুক্তিকথা আছে। প্রতি উপজেলার একটি স্কুল, একটি কলেজ সরকারী বা জাতীয় করণ করলে উখিয়া কলেজকে তালিকাভুক্ত না করার কোন যুক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। সে বিষয়টি বিচার করবে অত্র জনপদের শিক্ষিত ও সাদা মনের সাধারণ জনগণ। কক্সবাজার জেলাতে ৮টি উপজেলা থাকলেও নীতিমালার সুবিধা থেকে বঞ্চিত ২টি কলেজ। তার মধ্যে উখিয়া ও পেকুয়া কলেজ।
উখিয়া কলেজের গর্ভণিংবডির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বদি, মাননীয় সংসদ সদস্য কক্সবাজার-৪, আসন-২৯৭। বিগত ৩ বৎসর তিনি গভর্ণিং বডির সভাপতি ছিলেন, সামনেও ৪ বছরের জন্য তিনি গভর্ণিং বডির সভাপতি হিসাবে মনোনিত হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কর্তৃক।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক দিয়ে রামু কলেজ, ও চকরিয়া কলেজের চেয়ে উখিয়া কলেজ কোন অংশে কম নয়। তারপরও কেন উখিয়া কলেজটি জাতীয়করণের তালিকা ভুক্ত হল না ?
শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে থাকা উখিয়ার কৃতি সন্তান জনাব আলহাজ্ব শফিউল আলম সাহেব বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চাকুরী আসনে অধিষ্টিত আছেন। অথাৎ কেবিনেট সচিব হিসেবে বাংলাদেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও সুলতান আহমদ বি.সি.এস একাডেমীর শিক্ষক ছিলেন, মির আহমদ, মগবুল মোর্শেদ দুলাল-তাঁরাও সরকারি চাকুরীর উচ্চ আসনে অধিষ্টিত। বর্তমানে বিদেশে কর্মরত আছেন মাসুদ মাহমুদ খোন্দাকার, রফিকুল করিম সহ আরো অনেকেই গুরুত্ব পূর্ণ আসনে দেশে ও বিদেশে চাকুরীতে অধিষ্ঠিত আছেন।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজটিতো উপজেলা ভিত্তিক নীতিমালার বাহিরে। সেটাতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব এখতিয়ারের একটি কলেজ, সেটা উখিয়া কলেজের সাথে বিচার করলেতো হবে না। উখিয়া কলেজকে জাতীয়করণ ভুক্ত না করণটিই এখন একটি প্রশ্নবোধক ? বিশাল মাঠ সমৃদ্ধ নিজস্ব ভুমির উপর নিজস্ব কলেজ-উখিয়া কলেজ। জনবল নিয়োগ, কলেজের ভুমি, বিভিন্ন একাডেমীক শাখা সমৃদ্ধ কলেজটি জাতীয়করণ করলেই অত্র জনপদের ব্যাপক মানুষ কম খরচেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেত। উখিয়া কলেজকে জাতীয়করণ ভুক্ত না করার সত্য কথাটি চিন্তা করার জন্য কোন নেতা, কোন সুজন, কোন সাদা মনের মানুষ, অত্র জনপদে কি নেই ? আর যদি নাইবা থাকলো, তাহলে সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে দ্রুত প্রসার ঘটানোর জন্য যে চিন্তা-ভাবনা করছেন, সেটা বিমাতা সূলভ কেন ? ৫০% ও ২৫% সুযোগ থাকা কলেজ গুলোই তো লাইম লাইটে চলে আসল। বয়স জৈষ্ঠ্য, বিজ্ঞতা সমৃদ্ধ কলেজ গুলো সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী তালিকার বাইরে পড়ে থাকলে, অত্র জনপদের জনসাধরণরা বিষয়টি ভালো চোখে দেখবেন! আমাদের প্রতি সদয় হোন ! উখিয়া কলেজ জাতীয়করণের ঘোষনা আপনার কাছে চাই-ই।
লেখক পরিচিতি:
এম. ফজলুল করিম, অধ্যক্ষ,
উখিয়া কলেজ।
পাঠকের মতামত